প্রকাশিত: ২৫/০৮/২০১৮ ৭:১৬ এএম

নিউজ ডেস্ক::
রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারেন সেজন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করেছিল নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রামের চার জেলার অন্তর্ভুক্ত ৩২ উপজেলায় নেওয়া হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা। কিন্তু তাতেও রোধ করা যায়নি ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি। নির্বাচন কমিশন বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার পরও নানা কৌশলে বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছে অনেক রোহিঙ্গা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক অনুসন্ধানে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় ২৪৩ জন রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। এসব ভোটারের বিষয়ে খোঁজ নিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে তারা।
নানা কৌশলে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানও।
বাংলা ট্রিবিউনকে মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে ভোটার হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নেই। আমরা শত চেষ্টা করেও রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়টি প্রতিরোধ করতে পারবো না। কারণ, তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যাবতীয় কাগজপত্র তৈরির পর ভোটার হওয়ার জন্য আসে। একজন নাগরিকের ভোটার হওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়, তারা সবগুলোই দিতে পারছে। নিজের জন্ম সনদ, বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, সবকিছু তারা জোগাড়ের পর তারা নির্বাচন কমিশনে আসে। কাগজপত্রগুলো ঠিক থাকায় তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।’ টাকার বিনিময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের সব কাগজপত্র সংগ্রহ করে দিচ্ছে বলেও দাবি করেন আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে চট্টগ্রামে আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে ২৪৩ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। জুলাই মাসে পাঠানো এই তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা রোহিঙ্গা নাগরিক হয়ে থাকতে পারেন। ওই সন্দেহ থেকে তালিকায় থাকা ২৪৩ জন নাগরিকের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে তালিকাটি পাঠানো হয়।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার (চট্টগ্রাম) মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা রোহিঙ্গা নাগরিক কিনা তা যাচাই করতে পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে ২৪৩ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। ইসি অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে এই তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি যাচাই করে দেখছেন।’
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নানা কৌশলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে যাচ্ছেন। টাকা দিলেই মিলছে জন্ম নিবন্ধন, ইউপি চেয়ারম্যানের সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। আর এসব কাগজপত্র ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট ও বাংলাদেশের নাগরিক হচ্ছেন। পরিচয় গোপন করে তারা অন্যের কাগজপত্রও ব্যবহার করে থাকে। টাকার বিনিময়ে সংঘবদ্ধ একটি দালালচক্র এসব কাগজপত্র রোহিঙ্গাদের সরবরাহ করে। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গারা পেয়ে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট। আর এসব ব্যবহার করেই তারা পরবর্তীতে ভোটার হচ্ছেন। পাসপোর্ট তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় এ ধরনের ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে ভোটার হতে এসে ইতোমধ্যে ধরাও পড়েছেন ৫-৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা টাকার বিনিময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে বিভিন্ন মাধ্যমে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করছে। গত কয়েক মাসে আমরা এরকম ৫-৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে শনাক্ত করেছি। আমরা তাদের আবেদন বাদ করে দিয়েছি।’

মুনীর হোসাইন খান বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ওই রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, তারা টাকার বিনিময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কাগজপত্র জোগাড় করেছে।’ এক্ষেত্রে একটি চক্র আছে, তাদের টাকা দিয়ে কাগজপত্র সংগ্রহ করা যায় বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘ভোটার হওয়ার জন্য স্থানীয়দের মতো তারাও সব বৈধ কাগজপত্র সরবরাহ করে। এ কারণে তাদের শনাক্ত করা খুব কঠিন। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া প্রতিরোধ করতে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। তারা সহযোগিতা না করলে কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকানো যাবে না।

পাঠকের মতামত

জনগণের ভালোবাসার টানেই জীবন উৎসর্গ করতে চান ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুন্নেছা বেবী!

গরীব-মেহনতী মানুষের জনদরদী হিসেবে পরিচিত, পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ গুণাবলীর অধিকারী, মহিলা নেত্রী কামরুন্নেছা বেবী। যিনি গেল ...

কক্সবাজারে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে ছাত্রলীগের পদযাত্রা

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ করেছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ। বিশ্বব্যাপী চলমান ...